শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধি.
রংপুরের পীরগাছায় শিক্ষকের অপমান সইতে না পেরে অভিমান করে মাহফুজুর রহমান(১৩) নামের এক শিক্ষার্থী গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করেছে। রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে উপজেলার ২নং পারুল ইউনিয়নের গুঞ্জর খাঁ ছাইতনতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থী একই গ্রামের মো. হাফিজুর রহমান ও মাহমুদা দম্পতির একমাত্র ছেলে ও দেউতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেধাবী শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে আসছিল। অন্যান্য দিনের মতো রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলে, অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল হান্নান ওই শিক্ষার্থীর নিকট পরীক্ষার ফি পরিশোধ করার কথা বলেন। পরে শিক্ষার্থী মাহফুজ পরীক্ষার ফি বাবদ এক হাজার টাকা দেন এবং বাকি টাকা কদিন পরে দিবেন বলে জানান।
তখন দুই শিক্ষকসহ অফিস সহকারী আমির হোসেন ও আতিয়ার রহমান বলেন, আজকেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। নাহলে পরীক্ষা দিতে পারবা না, তখন শিক্ষার্থী মাহফুজ গরীব পরিবারের সন্তান বলে শিক্ষক ও অফিস সহকারিদের নিকট অনেক অনুনয় বিনয় করে। একপর্যায়ে শিক্ষকরা বলেন এতো গরীব হলে পড়াশোনা করার দরকার কি? এখনি টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তুমি পরীক্ষা দিতে পারবা না! এখানে থেকে কোন লাভ নাই তুমি চলে যাও। তখন শিক্ষার্থী মাহফুজ উল্লেখিত জন ছাড়াও একাধিক শিক্ষকের নিকট অনুনয় বিনয় করেন। কোনভাবেই শিক্ষকদের মন গলাতে না পেরে বাড়িতে চলে যান। এবং অভিমান করে তার দক্ষিণ দুয়ারী শোয়ার ঘরে তীরে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
নিহত মাহফুজের নানা মজিরব রহমান বলেন, আমার নাতী ইতিপূর্বে ৫ টা পরীক্ষা দিসে, হঠাৎ আজকে পরীক্ষা দিতে গেলে শিক্ষকরা বাঁধা দেয়! পরীক্ষা দিতে না পারার ক্ষোভে আমার নাতী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
দেউতি স্থায়ী বাসিন্দা হারুন-অর-রশিদ, এনামুল হক বলেন, দেউতি স্কুলের শিক্ষক আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর নিহত শিক্ষার্থীকে গলা ধাক্কা দেয়ার কথা শুনেছি। নিহত শিক্ষার্থী শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে অভিমানেই আত্মহত্যা করেছে! আমরা এই ঘটনায় জরিত শিক্ষক কর্মচারীদের ন্যায় বিচার চাই। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ আছে। যেই শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার কারনে আজকে এই ঘটনা ঘটেছে আমরা এলাকাবাসী তাদের ফাঁসি চাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওই শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন করা ছিলনা তাই তার পরীক্ষা নেয়া হয়নি। রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া ৫টা পরীক্ষা কিভাবে দিল জানতে চাইলে তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
দেউতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম মিজানুর রহমান সাজু বলেন, আমি অনেক আগেই শহরে এসেছি বিষয়টি জানতাম না। বিকেলে শুনেছি ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মাহফুজ আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন ওই শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন করা ছিল না। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া পাঁচটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি, বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। লাশ বর্তমানে থানায় আনা হয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে এ ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে।